আল্লাহকে বিশ্বাস করি কেন? (পর্ব-১)


 
আল্লাহকে বিশ্বাস করি কেন?

০৪ রমজান ১৪৩১ হিজ্রী, ১৫ আগস্ট ২০১০ ইং, ৩১ শ্রাবণ ১৪১৭ বাংলা, রবিবার, বিকাল ০৫:২০।

গোড়ার কথা

আরম্ভ করছি একমাত্র সৃষ্টিকর্তার নামে, যিনি পরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি করেছেন এ বসুন্ধরা এবং সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত করছেন বিশাল এ সৃষ্টিজগৎ।

এবারের গ্রীষ্মের ছুটি কাটানো আরম্ভ হয়েছে জ্বরের মাধ্যমে, আর শেষ হয়েছে ঢাকা’য় বেড়ানোর মধ্য দিয়ে। জ্বর সারতে না সারতে আমার এক খালাতো ভাইয়ের বিবাহানুষ্ঠানে অংশ গ্রহণের জন্য ঢাকা যেতে হল। সে উপলক্ষ্যে ৭ দিন ঢাকায় বেড়ানোর মাধ্যমে গ্রীষ্মের ছুটি উপযুক্তভাবে কাটানো গেল। নীলক্ষেতে ব্যবসা করেন আমার ছোট ভগ্নিপতি। সাথে ছোটবোনও থাকে। ওদের বাসায় যেতে হল। ফেরার সময় নীলক্ষেত বইয়ের দোকাগুলোয় একটি জরুরী বই খুঁজছিলাম। বইটি না পেয়ে অনেকটা নিরাশ হয়ে গেলাম। এক পর্যায়ে এক দোকানে অন্য একটি বইয়ে নজর গেল। প্রবীর ঘোষ লিখিত “আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না।” দে’জ পাবলিশিং॥ কলকাতা। দিনটি ছিল ২৪ মে ২০১০। এ ধরনের বইয়ের প্রতি আমার একটা সহজাত কৌতুহল আছে। দেখি, নাস্তিক হওয়া যায় কিনা! আস্তিক হওয়ায় অনেক অসুবিধা। অথবা মানুষ কোন্ যুক্তির ভিত্তিতে নাস্তিক হয়, বিষয়টা জানার জন্য।

পড়তে পারেন একটি বিশেষ নিবন্ধ: ভাইরাস এবং রোগজীবাণুর ধারণা বিজ্ঞান-সৃষ্ট ভুত!

আমার আবার বেশ আলসেমির অভ্যাস। বইটি কিছুটা কৌতুহল নিয়ে কিনেছি ঠিকই, কিন্তু আলসেমির আধিক্যের কারণে অধ্যয়ন বা একটু নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগ হচ্ছিল না। তবু মাঝে মধ্যে যখন দেখতাম একেবারে কোনো কাজ নেই, ঘুম বা এমনি শুয়ে থাকতেও ভাল লাগছে না, তখন শুয়ে শুয়ে বইটির দু’একটা অধ্যায় পড়তাম। গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যে দাগ দিতাম। সাথে সাথে মনে একটা ইচ্ছা ছিল, সম্ভব ও সুযোগ হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বই-জাতীয় কিছু একটা লেখার চেষ্টা করব। এই যে আজ কিছু অলস সময় পেলাম বলে লেখা আরম্ভ করলাম, কিন্তু কখন যে কাজটা পূর্ণতা পায় বা আদৌ পাবে কিনা সে ব্যাপারে মনে কোনো তাড়া নেই; সময়ই শুধু বলে দেবে তা।

বইটি কেন লিখছি?

অবশ্য “আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না” বইটি হাতে পাবার ফলে বা বইটি পাঠের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই যে এ বই লেখার মনোভাব হল, তা নয়। আমি আস্তিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। জন্মসূত্রে আমি আস্তিক। এখনো, এ পরিণত বয়সেও আমি আস্তিক। ধর্মের নাম-গন্ধহীন পরিবার বিশ্বের কোথাও আছে কিনা জানি না, থাকতেও পারে। সে ধরনের পরিবারে জন্ম নিলে আমি এখন কী থাকতাম, জানি না। তবে আপাততঃ জানি আমি এখন আস্তিক। কিন্তু যে সমাজে বা যে দেশে আমি বাস করি সেখানে সবাই কিন্তু আস্তিক নয়। নাস্তিকও আছে এবং ইদানিং নাস্তিকের সংখ্যা লক্ষ্যণীয় হারে বাড়ছে। এ আবহাওয়ায় নাস্তিকতার বাতাস আমার মনেও প্রবাহিত হয়। মাঝে মাঝে আমারও মন চায় নাস্তিক জীবনযাপন করতে। নাস্তিকতার মজা এবং আকর্ষণ মাঝে মাঝে আমাকে আকর্ষণ করে, হাতছানি দিয়ে ডাকে। আমার বাল্যবন্ধু অনেকে না হলেও কেউ কেউ এখন দেখি নাস্তিকতার আকাশে সানন্দে উড়ে বেড়ায়। আমারও কখনো কখনো সে রকম উড়ে বেড়াতে মন চায়।

তাছাড়া ধর্মের বাধ্যবাধকতা কখনো কখনো মনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। মন তখন পালিয়ে যেতে চায় নাস্তিকতার বিশ্বে, যেখানে স্রষ্টার কাছে জবাবদিহিতার প্রশ্ন নেই; ধর্ম কোনো কাজে অযাচিত বিঘœ সৃষ্টি করে না। কিন্তু অবশেষে দেখি আমি আস্তিক। আমি আস্তিক ছিলাম, আস্তিকই রয়ে গেছি, এবং আমাকে আমৃত্যু আস্তিক থাকতে হবে। আস্তিকতার পক্ষে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় মনে অনেক যুক্তি এসে ভীড় করে। এ যুক্তিগুলো কি আমার অজ্ঞতামূলক, নাকি সঙ্গত, তা যাচাই করার জন্য প্রয়োজন যুক্তিগুলো অন্যের নিকট উপস্থাপন করা। উপস্থাপনের জন্য উত্তম পন্থা হিসেবে বই লেখাকেই বেছে নিলাম। বিজ্ঞ পাঠকগণ সম্ভব হলে আমাকে আমার অজ্ঞতার ব্যাপারে সচেতন করবেন--এ আমার বিনীত অনুরোধ।

যাহোক এ বই এখন না হলেও পরে লেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু প্রবীর ঘোষের বইটি হাতে পাওয়া--এ বই আগেভাগে লেখার একটা কারণ হয়ে দাঁড়াল।

প্রথম অধ্যায়

দিন দিন মানুষ বাড়ে

বিষয়টি কিছুটা লজ্জাকর হলেও বাস্তব এবং প্রকাশ্য বিষয় বলে বলতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশে জন্মহার খুব বেশী। অবশ্য শুধু বাংলাদেশের দোষ দিয়ে লাভ কী, এশিয়ার অধিকাংশ দেশে জন্মহার বেশী, আয়তনের অনুপাতে জনসংখ্যা প্রচুর। এশিয়ার কোনো কোনো দেশের আয়তনানুপাত জনসংখ্যার সাথে অন্য মহাদেশের কোনো কোনো দেশের তুলনা করলে প্রায় বিপরীত অবস্থা দেখা যেতে পারে।

     আমাদের পরিবারে ১৯৯২ সালেও আমরা ছয় ভাই-বোন আর মা-বাবা সহ ৮ জন ছিলাম। আমাদের ছয় ভাই-বোনের জন্মের আগে আমাদের পরিবারে শুধু মা-বাবা দু’জনই ছিলেন। দেখা যাচ্ছে দিন দিন মানুষ বাড়ে। যতই দিন যায় পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়তেই থাকে। এ বিষয়টার বিপরীত অবস্থা কী?

   সাধারণতঃ দশ বছর পর পর আদমশুমারী হয়। এ বছর কোনো দেশের জনসংখ্যা যদি হয় দশ কোটি, দিন দিন যেহেতু জনসংখ্যা বাড়ে, সেহেতু এর আগের আদমশুমারী দেখলে দেখা যাবে তখন জনসংখ্যা আরো কম ছিল। এভাবে দশ বছর করে পেছনে গেলে পৃথিবীর জনসংখ্যার হিসাব কোন্ দিকে যাবে? হ্যাঁ, কমের দিকেই যাবে।

   আমাদের বাড়ির নামটা আমার দাদার নামেই। এক সময় আমাদের বাড়িতে দু’জন পুরুষ তাঁদের স্ত্রীসহ মোট চারজন ছিলেন। এখন আমাদের বাড়ি সম্প্রসারিত হয়ে তিনটি বাড়ি হয়েছে। আমার দাদা এবং অন্য যে পুরুষ লোকটি ছিলেন আমার চাচা-সম্পর্কের, তাঁদের সন্তান, নাতি-পুতি হিসাব করাটা এখন হবে কষ্টকর।

   এভাবে সামনে গেলে জনসংখ্যার হিসাব বাড়তে থাকে, আর পেছনে গেলে কমতে থাকে। সামনে যেতে যেতে অধিক জনসংখ্যার পরিণতি কিসে গিয়ে পৌঁছে, তা আপাততঃ চিন্তা না করে আমরা একটু পেছনে যাই।

মানবজাতির উদ্বোধন কয়জন দিয়ে?

   দেখা যাচ্ছে যতই পেছনে জনসংখ্যার চাকা ঘোরানো হয় ততই হিসাব নিম্নগামী হয়। নিম্নগামী হওয়ার এ পথে আমরা একটু চিন্তা করতে পারি, ঠিক কয়জন দিয়ে মানবজাতির পথচলা আরম্ভ হয়েছে? দশজন, একশজন, একহাজারজন; নাকি অসংখ্য মানুষ দিয়ে?

   আমরা অবশ্য কেউই তখন ছিলাম না যে, নিশ্চিতভাবে সংখ্যাটি বলতে পারব। আনুমানিক ধরে নিতে পারি এক হাজার বা ততোধিক সংখ্যক মানুষ দিয়ে পৃথিবীতে মানব জাতি বসবাস আরম্ভ করেছে। এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে এ এতোগুলো মানুষ একসাথে কোত্থেকে বা কোন্ গ্রহ থেকে এখানে উড়ে এসে জুড়ে বসলো, তখন আমরা নীরব হযে যেতে বাধ্য। কারণ আমাদের সামনে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি, বা ইতিহাসে এ জাতীয় কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না।

          মানবজাতির উদ্বোধনী সংখ্যা দশ জন, একশ’ জন বা পাঁচশ’ জন ধরে নিলেও প্রশ্নটি জবাবহীন থেকে যায়।

   তুলনামূলক ভাবে সহজ হয় দু’জন ধরে নিলে। একজন পুরুষ, একজন মহিলা। কারণ, মানব জাতির বংশবিস্তারের জন্য দু’লিঙ্গের দু’জন হলেই যথেষ্ট। এক্ষেত্রেও কিন্তু প্রশ্নটি থেকে যায়। এ দু’জন মানুষ কোত্থেকে এখানে বসবাস করতে এল, বেড়াতে এল? এদেরকে কে পাঠিয়েছে? তবে একটা প্রশ্ন সচরাচর মনে আসে না। সেটা হল, ‘এরা কিভাবে নিজেদের সৃষ্টি বা তৈরি করেছে?’ কারণ মানুষ কখনো নিজেদের তৈরি করতে পারে না।

   ‘কোত্থেকে এল’ প্রশ্নের আপাততঃ আমাদের কাছে দু’রকম উত্তর আছে। এক. মানুষ বানর থেকে বিবর্তন হয়ে এসেছে। দুই. ‘বিগ ব্যাং’(ব্যাখ্যা পরে আসবে)-এর পর নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অণু-পরমাণুর সৃষ্টি হতে লাগল এবং তাদের রূপান্তরও ঘটতে লাগল। অণু ক্রমশঃ জটিল থেকে জটিলতর হতে শুরু করল। শেষে রেপ্লিকেটিং মলিকিউল এল। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এক সময় এল ইউকেরিয়োটিক সেল। এই সেল বা কোষের মধ্যে এল জেনেটিক কোষ। এই কোষ থেকেই প্রাণের সৃষ্টি হল। প্রথমে এল এককোষী প্রাণী, তারপর বহুকোষী। এককোষী প্রাণী থেকে যে রূপান্তর সৃষ্টি হয়েছিল, তারই শেষ পরিণতি মানুষ।

[কলকাতার কট্টর নাস্তিক লেখক প্রবীর ঘোষের ‘‘আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না’’ বইটির উত্তরে এই বইটি লেখা। ‍পুরো বই পড়ুন অনলাইনেই।

১ম পর্ব: https://biliefingod.blogspot.com/2020/08/blog-post.html

২য় পর্ব: https://biliefingod.blogspot.com/2020/08/blog-post_27.html

৩য় পর্ব: https://biliefingod.blogspot.com/2020/08/blog-post_55.html

৪র্থ পর্ব: https://biliefingod.blogspot.com/2020/08/blog-post_83.html

৫ম পর্ব: https://biliefingod.blogspot.com/2020/08/blog-post_32.html

৬ষ্ঠ পর্ব: https://biliefingod.blogspot.com/2020/08/blog-post_31.html

শেষ পর্ব: https://biliefingod.blogspot.com/2020/08/blog-post_42.html]

Post a Comment

0 Comments