এক. মানুষ বানর থেকে, নাকি বানর মানুষ থেকে বিবর্তিত?
জড় ও জীব নিয়ে পৃথিবী। জড়বস্তুর আলোচনা এখানে অপ্রাসঙ্গিক। মানুষ-বানর ইত্যাদি হল জীব বা প্রাণী। পৃথিবীতে মোট প্রাণীর সংখ্যা কেমন? উদ্ভিদ বাদ দিলেও পৃথিবীতে দশ রকমের ফাইলামের (PHYLUM) প্রাণী আছেঃ (১) Protozoa (২) Porifera (৩) Coelenterata (৪) Platyhelminthes (৫) Nemathelminthes (৬) Annelida (৭) Arthropoda (৮) Mollusca (৯) Echinodermata (১০) Chordata. এর মধ্য থেকে Chordata অর্থাৎ মেরুদন্ডী প্রাণীও আবার পাঁচ ভাগঃ (১) পাখি (২) মাছ (৩) সরীসৃপ (৪) উভচর ও (৫) স্তন্যপায়ী। এ স্তন্যপায়ী পৃথিবীতে আছে ৩৫০০ জাতের। এ ৩৫০০ জাতের এক জাত হচ্ছে মানুষ। চার্লস ডারউইন নামে প্রয়াত এক বৃটিশ বিজ্ঞানী অনেক কষ্টে-শিষ্টে আবিষ্কার করলেন, জীবজগতের অভ্যুদয়ের সময় নাকি মানুষ নামক কোনো প্রাণী ছিল না। বাকি লক্ষ লক্ষ জাত-প্রজাতের প্রাণী একসাথে পথচলা আরম্ভ করলেও মানুষের পথচলা আরম্ভ হয়েছে পরে, বানর থেকে বিবর্তিত হয়ে! কী দুর্ভাগ্য মানুষের, লক্ষ লক্ষ জাত-প্রজাতের সাথে মানুষের ভাগ্যে জুটল না শুরু থেকে পৃথিবীতে বসবাস করার!
অন্যসব প্রাণী বিবর্তন ছাড়াই রাস্তায় নামতে পারল, কিন্তু মানুষের বেলায় বিপত্তি ঘটলো কেন, এ প্রশ্নের কী জবাব দিয়ে গেছেন বিজ্ঞানী ডারউইন? অথচ দেখা যায় যেন মানুষকে উদ্দেশ্য করেই বাকি সব সৃষ্টির অস্তিত্ব। অন্যসব সৃষ্টি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষের কাজেই আসছে, মানুষ আসছে না অন্য কোনো সৃষ্টির কাজে। অন্য সৃষ্টির জীবনের জন্য মানুষের প্রয়োজন নেই, কিন্তু মানুষের জন্য অন্যান্য সৃষ্টির প্রয়োজন আছে। সূর্য মানুষের কাজেই লাগে; তাপ দেয়, আলো দেয়, দিন-রাত তৈরি করে। কিন্তু মানুষ সূর্যের কী কাজে আসে! ফলমূল, শস্যফসল, শাকসব্জি, পশুপাখি ছাড়া মানুষের জীবন অনেকটা কঠিন বা অসম্ভব, কিন্তু মানুষ ছাড়া ওদের জীবন সচ্ছন্দ। ওরা আগমণ করল যে মানুষের জন্য, সে মানুষ যদি নাইবা থাকল, তাহলে ওরা অনর্থক আগে এলো কেন?
মানুষ বানর থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে আগমণ করল যদি মেনে নিই, তাহলে বলতে হবে বানর কোন্ প্রাণী থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে এলো? তাছাড়া বানর বিবর্তিত হয়ে আধুনিক মানুষে পরিণত হল, এরপর মানুষ আবার বিবর্তিত হয়ে অন্য প্রাণীতে পরিণত হয় না কেন, বিবর্তন এখন থেমে আছে কেন? আমরা আরো আধুনিক হতে চাই। আমরা এমন মানুষ হতে চাই, রোগ যাদের স্পর্শ করে না, যাদের মৃত্যু হয় না। কখনো সড়ক দুর্ঘটনায় পিষে গেলেও সাথে সাথে আমরা যেন আগের মত সুস্থ দেহ নিয়ে উঠে দাঁড়াতে পারি। কিন্তু পারছি কই?
আমার এক বন্ধুকে সেদিন বললাম, বানর আধুনিক হতে হতে মানুষে এসে পরিণত হওয়ার যে থিওরীটা ডারউইন অনেক গবেষণার পর আবিষ্কার করলেন, এ ব্যাপারে তুমি কি মনে কর? সে বলল, ‘কই কোথাও দু’একটা বানর মানুষ হয়ে গেছে এমন তো ঘটতে দেখিনা বা শুনিনা।’ আমি বললাম, বিগত একশ’ বছরেও দু’একটা বানর মানুষ হওয়ার কথা তো লোকমুখে গুজব হিসেবেও শুনা যায় না, বাস্তবে ঘটা তো দূরের কথা। সে বলল, ‘এক হাজার বছরেও কোনো বানর মানুষ হওয়ার নজীর নেই।’
আমি ১৯৯৮ সালে ঢাকা চিড়িয়াখানায় গিয়েছি। এবারও গিয়েছি। কই, সংরক্ষিত বানরগুলোর কোনটিও এ ক’বছরে মানুষ হওয়ার পথে সামান্য পরিমাণ অগ্রসর হতে পারেনি।
শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ ‘মানুষ’ রূপেই পৃথিবীতে আগমণ করল, এ সহজ ও ইতিবাচক হিসেবটা করার সময় বিজ্ঞানী মশাইর চিন্তাজগৎ কোনোভাবে বাধাগ্রস্থ হল কিনা, কে জানে! যা হোক, এসব আজে বাজে বিশ্বাসে কান দেবার মত সময় আশা করি সুস্থ মস্তিষ্কের কারো হবে না ভবিষ্যতে।
দুই. বিস্ফোরণ থেকে সুন্দর সার্থক মানুষ তৈরি হয়, উদ্ভট নাকি সঙ্গত যুক্তি?
মানব জাতির আরম্ভিক দু’সদস্য ‘কোত্থেকে এল’ প্রশ্নের দ্বিতীয় বিকল্প উত্তর হতে পারে মহাবিস্ফোরণ (Big Bang) তত্ত্ব। মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব কী, এ সম্পর্কে প্রথমে আমাদের একটু জানা দরকার। ২৮ আগস্ট ১৯৯৮ ইং (১৩ ভাদ্র ১৪০৫ বাংলা) ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক জনকন্ঠে’র ‘বিজ্ঞান ও পরিবেশ’ পাতায় ‘মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য’ (লেখকঃ এনামুল হক) নামে এক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। নিবন্ধের ‘মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব কিভাবে এলো’ অংশটি এখানে উদ্ধৃত করছিঃ
মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব কিভাবে এলো?
“মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব (ইরম ইধহম) প্রথম প্রস্তাবিত হয় ১৯২০-এর দশকে। প্রথম দিকে বিজ্ঞানীদের অনেকে এই তত্ত্বের বিরোধিতা করলেও পরবর্তীকালে এটি ব্যাপকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯২৭ সালে বেলজিয়ামের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও ক্যাথলিক যাজক জর্জ লেমাইত্রে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। তাতে তিনি মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ ঘটলে আইনস্টাইনের মধ্যাকর্ষণ সংক্রান্ত সমীকরণের কী হবে তা পর্যালোচনা করেছিলেন। সে সময় আইনস্টাইনসহ বেশিরভাগ সাংবাদিক বিশ্বাস করতেন যে, মহাবিশ্ব স্থির। লেমাইত্রের লেখাটি ছাপা হওয়ার কয়েক বছর আগে রুশ গণিতবিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্রিডম্যান বলেছিলেন যে, মহাবিশ্ব স্থির নয়-খুব সম্ভব এর সম্প্রসারণ ঘটে চলেছে। আইনস্টাইন ও ফ্রিডম্যান-এই দু’জনের চিন্তাধারার মিশ্রণ ঘটিয়ে লেমাইত্রে একটা বিচিত্র সিদ্ধান্তে পৌঁছান। তিনি বলেন, একদা মহাবিশ্বের সমস্ত পদার্থ একটি নির্দিষ্ট স্থানে ছিল। বলা যায় একটি “আদিম এ্যাটমের” মধ্যে আবদ্ধ ছিল এবং সেই এ্যাটমের ভর ছিল অচিন্তনীয় রকমের বিপুল। অধিকাংশ বিজ্ঞানীই তখন লেমাইত্রের এই ধারণাকে ব্যঙ্গবিদ্রুপে বিদ্ধ করেছিলেন। এর পিছনে তাদের এমন উদ্বেগও খানিকটা কাজ করেছিল যে এটা হয়ত সৃষ্টির মুহূর্ত সম্পর্কে ধর্মতাত্ত্বিক যে ব্যাখ্যা আছে সেটাকেই বিশ্বাসযোগ্যতা দেয়ার একটা চেষ্টা মাত্র।
ঠিক দু’বছর পর এডউইন হাবল জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্যতম অসাধারণ একটি আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে, দূরবর্তী নিহারীকাগুলোর আলো লাল তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে (Wavelength) দিকে সরে যাচ্ছে। আলোর উৎস থেকে দুরত্ব যত বেশী, লাল তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে দিকে সরে যাওয়ার হারও তত বেশী। এর অর্থই হলো, নীহারিকাগুলো অপরূপ সুন্দর ঝাড়লন্ঠনের মতো স্থির নয় বরং তারা পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ফ্রিডম্যান ও লেমাইত্রে অন্তর্দৃষ্টিতে যা দেখতে পেয়েছিলেন হাবল স্বচক্ষে সে জিনিসটাই দেখতে পেয়েছেন। নীহারিকাগুলোর পরস্পর থেকে দূরে সরে যাওয়া থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে, সৃষ্টির মুহূর্তে সবকিছু একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ছিল। তারপর তা বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। মহাবিশ্বের শুরুটাও মহাবিস্ফোরণের আকারে এভাবেই হয়েছিল।
কথাটা সবাই যে মানলেন তা নয়। ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রেড হয়েল বিশ্বাস করতেন যে, মহাবিশ্বের কোনো সূচনা ছিল না। এটা স্থির অবস্থায় রয়ে গেছে। মহাবিস্ফোরণের আকারে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারকে তিনি ঠাট্টা করে নাম দিলেন ‘বিগ-ব্যাং’। এই নামটাই শেষ পর্যন্ত টিকে গেল।
১৯৬৫ সালে আর্নো পেনজিয়াস ও রবার্ট উইলসন নামে দুই বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন যে, নীহারিকাগুলোর মধ্যবর্তী শূন্যস্থান সম্পূর্ণ শীতল নয় বরং পরম হিমাংকের কয়েক ডিগ্রী বেশি এবং এই অবস্থায় ওখান থেকে বিকিরণ ঘটে। তারকাগুলোর উত্তাপ মোটেই তেমন ঘনীভূত নয় যা থেকে এই বিকিরণ ঘটতে পারে। এর একমাত্র ব্যাখ্যা হলো--এই বিকিরণ হলো মহাবিশ্বের সৃষ্টির সময়কার। সে সময় মহাবিশ্ব অতি তপ্ত অবস্থায় ছিল এবং এক পর্যায়ে সেটা আদিম বিস্ফোরণের আকারে ফেটে পড়ে। এই বিস্ফোরণের সময় আলোর যে বিকিরণ ঘটেছিল তা আজও রয়ে গেছে মহাশূন্যের বুকে। মহাবিশ্বের সৃষ্টিকালীন বিকিরণ আবিষ্কৃত হওয়ার পর প্রায় সকল জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী কোনো না কোনোভাবে মহাবিস্ফোরণ (Big Bang) তত্ত্বটি সমর্থন করতে শুরু করেন।”
এককথায় আজকের মহাবিশ্ব একসময় একটি “আদিম এ্যাটম”-এর মধ্যে আবদ্ধ ছিল অতি তপ্ত অবস্থায়। একপর্যায়ে তা বিস্ফোরিত হয়। সে বিস্ফোরণ থেকে মহাবিশ্ব, তারকা, পৃথিবী, উদ্ভিদ, পশু, পাখি, মানুষ প্রভৃতির সৃষ্টি।
মহাবিস্ফোরণের এ তত্ত্ব¡মতে বিস্ফোরণের পরিণতি বা ফল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এক সুন্দর, অদ্ভুত মহাবিশ্ব। কিন্তু বিস্ফোরণের ফল কি সচরাচর এ রকম হয়? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানে সংঘটিত ‘হিরোশিমা ট্রাজেডি’ স্মরণে ‘দৈনিক জনকন্ঠ সাময়িকী’তে ১৯ শ্রাবণ ১৪০৮ বাংলা তারিখে “আণবিক যুদ্ধ” (লেখকঃ শান্তা মারিয়া) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের “আণবিক ধ্বংসযজ্ঞ” অনুচ্ছেদটি উদ্ধৃত করছিঃ
আণবিক ধ্বংসযজ্ঞ
“০৬ আগস্ট ১৯৪৫। সকাল ০৮টা ১৬ মিনিট ১৩ সেকেন্ড। স্বাভাবিকভাবেই চলছিল হিরোশিমার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বাচ্চারা যাচ্ছিল স্কুলে, মেয়েরা ব্যস্ত ছিল ঘরকণ্যার কাজে। হিরোশিমার আকাশে দেখা দিল মার্কিন বোমারু বিমান ফ্লাইং কোর্টেস বি-২৯ এ্যানালগে। মাটি থেকে মাত্র ৫৮০ মিটার উঁচুতে নিক্ষিপ্ত হলো লিটলবয়। বিস্ফোরণের ফলে ব্যাঙের ছাতার মতো উঁচু হয়ে ওঠে পারমাণবিক মেঘ। ১৭ হাজার মিটার উঁচু হয়ে উঠেছিল এই পারমাণবিক মেঘ। চোখ ধাঁধাঁনো আলো, আর প্রচন্ড শব্দের সৃষ্টি হয়। বিস্ফোরণের কেন্দ্রভূমি পরিণত হয় অগ্নিকুন্ডে। প্রতি বর্গমিটারে ৩৫ টন শকওয়েভ শক্তি উৎপন্ন হয়। দুর্ঘটনাস্থলে বাতাসের বেগ ছিল প্রতি সেকেন্ডে ৪৪০ মিটার। হিরোশিমায় নিহত হন এক লক্ষ চল্লিশ হাজার মানুষ। মারাত্মকভাবে আহত হন আরো অনেকে।
নাগাসাকিতে ফ্যাটম্যান নিক্ষিপ্ত হয় ৯ আগস্ট। এর ক্ষমতা ছিল ২২ হাজার টন টিএনটির সমান। বোমাটির ওজন ছিল ৪.৫ টন। বি-২৯ বকসকার বোমারু বিমান থেকে এই বোমাটি ফেলা হয়। সত্তর হাজারেরও বেশি মানুষ এতে মৃত্যুবরণ করেন। শুধু যে বিস্ফোরণের সময় লোকে প্রাণ হারায় তা নয়, বছরের পর বছর ধরে পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়ায় প্রাণ হারায় মানুষ, আক্রান্ত হয় নানা রকম রোগে। বিকৃত, বিকলাঙ্গ দেহ নিয়ে জন্মায় বহু শিশু।
পারমাণবিক বোমার ঘা নিয়ে বেঁচে থাকা জাপানীরা নিজেদের বলে হিবাকুশা। হিবাকুশা যেন জীবন্মৃত। অনেকেই বিয়ে করেননি কখনো। যদি বিকৃত দেহ সন্তান জন্মায়-এই ভয় এখনো ঘিরে রেখেছে তাদের।”
বিস্ফোরণ দ্বারা সাধারণত ধ্বংস হয় কোনো কিছু। কিন্তু বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্টি হওয়ার ধারণা পাই আমরা শুধুই ‘মহাবিস্ফোরণ তত্ত’¡ থেকে। মহাবিস্ফোরণ সত্যিই ঘটেছিল কিনা, এ ব্যাপারে আপাততঃ কোনো মন্তব্য না করে ধরেই নিলাম ঘটেছিল। প্রবীর ঘোষের বইতে অজিতকুমার সাহা নামক জনৈক বিজ্ঞানীর মহাবিস্ফোরণ সম্পর্কিত একটা বক্তব্য তুলে ধরছিঃ
মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব (Big Bang)
“যতদুর পর্যন্ত জানা যায়, বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড শূন্য থেকে সৃষ্টি হয়নি। একটি বিশ্ব ছিল, যার মধ্যে ছিল তেজঃপূর্ণ প্রচন্ড শক্তি। কেমন তার শক্তি, কি তার বৈশিষ্ট্য এখনো জানা যায়নি। শুধু জানতে পারা গেছে, ওই তেজঃপূর্ণ প্রচন্ড শক্তিতে পূর্ণ বিশ্বে সে ধরনের কোনো পদার্থ ছিল না, যে সব পদার্থের সাথে বর্তমানে আমরা পরিচিত।
তারপর একসময় ওই তেজঃপুঞ্জ বিস্ফোরিত হল। বিস্ফোরণের সময়--এক হাজার থেকে দু’হাজার কোটি বছর আগে। গড় ধরে বলা যেতে পারে, আনুমানিক দেড় হাজার কোটি বছর আগে। সেই বিস্ফোরণের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিগ ব্যাং’। এই বিস্ফোরণের পরেই সৃষ্টি হল কোয়ার্ক ইত্যাদি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কিছু কণা। তখনই বিশ্ব সৃষ্টি হল। বিস্ফোরণের পর বিশ্ব যেমন আয়তনে বাড়তে লাগল, তেমনই একসময় তার উত্তাপ কমতে শুরু করল। বিশ্ব সম্প্রসারিত আর শীতল হতেই থাকল। একটা পর্যায়ে সৃষ্টি হল হাইড্রোজেন। হাইড্রোজেন তারকা সৃষ্টির ক্ষেত্রে অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। এইভাবে সৃষ্টি হল তারার। সৃষ্টি হল আবার ধ্বংসও হল। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে উদ্ভব হল বিভিন্ন ভারী পদার্থের, ইংরেজীতে যাকে বলে হেভি এলিমেন্ট।
নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অণু-পরমাণুর সৃষ্টি হতে লাগল এবং তাদের রূপান্তরও ঘটতে লাগল। অণু ক্রমশঃ জটিল থেকে জটিলতর হতে শুরু করল। শেষে রেপ্লিকেটিং মলিকিউল এল। রেপ্লিকেটিং মলিকিউল মানে সেই ধরণের মলিকিউল, যা থেকে ঠিক এক ধরণের মলিকিউল তৈরি হতে পারে। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একসময় এল ইউক্যারিয়োটিক সেল। এই সেল বা কোষের মধ্যে এল জেনেটিক কোষ। এই থেকেই প্রাণের সৃষ্টি হল। প্রথমে এল এককোষী প্রাণী, তারপর বহুকোষী।
মানুষ এসেছে সবার শেষে। মানুষের আগমণ মাত্র তিরিশ লক্ষ বছর আগে। মানুষ একেবারে পৃথিবীতে আসেনি। এককোষী প্রাণীর থেকে যে রূপান্তর সৃষ্টি হয়েছিল, তারই শেষ পরিণতি মানুষ।” [পৃ-৯৮]
এ বক্তব্য থেকে জানা যায়, মহাবিশ্ব শূন্য থেকে সৃষ্টি হয়নি। প্রথমে একটি তেজঃপূর্ণ প্রচন্ড শক্তিশালী বিশ্ব ছিল। তা বিস্ফোরিত হল। বিস্ফোরণের পর বিশ্ব সৃষ্টি হল। এরপর একপর্যায়ে সৃষ্টি হল হাইড্রোজেন। হাইড্রোজেন থেকে সৃষ্টি হল তারকা। নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অণু-পরমাণুর সৃষ্টি হতে লাগল এবং তাদের রূপান্তরও (সয়ংক্রিয়ভাবে!) ঘটতে লাগল। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এক সময় এল কোষ। কোষ থেকে সৃষ্টি হল প্রাণ। প্রথমে এল এককোষী প্রাণী, তারপর বহুকোষী। এককোষী প্রাণী রূপান্তরিত হয়ে মানুষে পরিণত হল। কী সুন্দর ধারাবাহিকতা!
[কলকাতার কট্টর নাস্তিক লেখক প্রবীর ঘোষের ‘‘আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না’’ বইটির উত্তরে এই বইটি লেখা। পুরো বই পড়ুন অনলাইনেই।
১ম পর্ব: https://biliefingod.blogspot.com/2020/08/blog-post.html
২য় পর্ব: https://biliefingod.blogspot.com/2020/08/blog-post_27.html
৩য় পর্ব: https://biliefingod.blogspot.com/2020/08/blog-post_55.html
৪র্থ পর্ব: https://biliefingod.blogspot.com/2020/08/blog-post_83.html
৫ম পর্ব: https://biliefingod.blogspot.com/2020/08/blog-post_32.html
৬ষ্ঠ পর্ব: https://biliefingod.blogspot.com/2020/08/blog-post_31.html
শেষ পর্ব: https://biliefingod.blogspot.com/2020/08/blog-post_42.html]
0 Comments